IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/৪৯

সূরা হুজুরাতে জাতিগত বৈষম্যের মোকাবেলা করা হয়েছে

0:08 - December 26, 2022
সংবাদ: 3473058
তেহরান (ইকনা): আজ, মানব সমাজের অন্যতম সমস্যা হল জাতিগত বৈষম্য, যদিও এই অপ্রীতিকর ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে মনে হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি সমাজের অমনোযোগ জাতিগত বৈষম্যের কারণ হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের ৪৯তম সূরার নাম ‘হুজুরাত’। ১৮ টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি ২৬ পারায় অবস্থিত। সূরা হুজুরাত, যা মাদানী সূরাগুলির মধ্যে একটি। নাযিলের ক্রমানুসারে ১০৭তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।

হুজুরাত শব্দটি হুজরাহ শব্দের বহুবচন এবং এর অর্থ হল ঘর। এই শব্দটি চতুর্থ আয়াতে এসেছে, তাই এই সূরাটিকে হুজুরাত বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে মসজিদের পাশে ইসলামের নবী (সা.)এর স্ত্রীদের জন্য প্রস্তুত করা ঘরগুলিকে বোঝানো হয়েছে।

এই সূরাটিতে নৈতিক আইন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সাথে যোগাযোগের আচার-আচরণ, নবী (সা.)এর সাথে যে আচরণগুলি অবশ্যই পালন করা উচিত এবং সমাজে লোকেরা কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে সম্পর্কিত আচরণ। এই সূরায় অন্যদের উপর ব্যক্তিদের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি এবং সমাজে শৃঙ্খলার শাসন এবং একটি সুখী জীবনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এবং সূরার শেষের দিকে ঈমান ও ইসলামের সত্যকে নির্দেশ করা হয়েছে।

এই সূরাটি মুসলমানদেরকে গুজবে কান না দিতে, গীবত ও অপবাদ এড়াতে ও অন্যের দোষ অনুসন্ধান না করতে এবং মুসলমানদের মধ্যে শান্তি ও পুনর্মিলন প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয়।

সূরা হুজুরাতের প্রথম আয়াতগুলোয় মু’মিনদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের  রসূলের সাথে সম্মান সহিত কথা বলা এবং তাঁর উপস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শনের সৌজন্য শিক্ষা দেওয়া বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি তারা নবী করিম (সা.)এর কণ্ঠস্বরের চেয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর উচ্চতর করে, তাহলে তা হবে তাদের নেক আমলের ক্ষতির কারণ।

এছাড়াও মুমিনদেরকে অসৎ লোকদের দ্বারা প্রদত্ত সংবাদ সম্পর্কে সতর্ক ও গবেষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই সূরার আরেকটি উপদেশ হল যে, যদি মু’মিনদের দুই দলের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে অন্যদের দায়িত্ব হল তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও শান্তি সৃষ্টি করা। এই সূরায় মুমিনদের একে অপরের ভাই হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে; তাই তাদের মধ্যে শান্তি থাকতে হবে।

এই সূরার একটি অংশে, সামাজিক শিষ্টাচার এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছয়টি ভুল নৈতিকতার আলোচনা করা হয়েছে, যা হল: একে অপরকে ঠাট্টা করা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা, দোষ-ত্রুটি করা, অন্যকে কুৎসিত নামে ডাকা, একে অপরের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা, অন্যদের জীবন ও কাজ সম্পর্কে যাচাই-বাছাই এবং কৌতূহল পোষণ করা এবং অন্যের অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করা।

এই সূরায় গুরুত্বরোপ করা হয়েছে যে, ত্বকের রঙ, বংশ, জাতি এবং জাতিগত বিষয়গুলি অন্যদের উপর মানুষের অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের উৎস হওয়া উচিত নয়, কারণ আল্লাহর মূল্যায়নের মানদণ্ড হল তাকওয়া ও পরহেজগারী।

এই সূরার শেষ আয়াতগুলোয় ইসলাম ও ঈমানের পার্থক্যের বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা দেখতে পাই যে, যারা মুসলমান এবং যাদের হৃদয়ে ঈমান রয়েছে তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

 
captcha