IQNA

ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইনের প্রয়োগ

2:34 - March 13, 2024
সংবাদ: 3475232
ইকনা: ভারত সরকার ২০১৯ সালে পাস হওয়া বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইনের আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়ন ঘোষণা করেছে, যা মুসলিমদের এই দেশের নাগরিকত্ব পেতে অস্বীকার করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সোমবার নাগরিকত্ব আইন ২০১৯ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে। এই আইনে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা মোদি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতার লড়াইয়ে নামার কয়েক সপ্তাহ আগে এমন ঘোষণা করা হলো।

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে যে সকল হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান পালিয়ে এসেছিল, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তাদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেবে। মুসলিমদের এই আইনের আওতায় রাখা হয়নি। উল্লেখ্য, ওই তিন দেশে মুসলিমরাই সংখ্যাগুরু।

২০১৯ সালে এই আইনকে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের সংসদ, তবে সে দেশের রাজধানী নয়াদিল্লি ও অন্যত্র ব্যাপক ও ভয়াবহ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হওয়ায় মোদি সরকার এর প্রয়োগ স্থগিত করেছিল। কয়েক দিন ধরে চলা সংঘর্ষে অনেকে নিহত হয়েছিল।

২০১৯ সালে সব ধর্মের মানুষ মিলিতভাবে এই আইনের প্রতিবাদ করেছিল। তারা বলেছিল, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের বুনিয়াদকে খর্ব করে এই আইন। মুসলিমরা বিশেষ করে উদ্বিগ্ন ছিল যে, প্রস্তাবিত জাতীয় জনপঞ্জি বা এনআরসি ও সিএএ ব্যবহার করে সরকার তাদের আরও প্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।

মোদি সরকারের দাবি, ভারতে অবৈধভাবে অনেক মানুষ প্রবেশ করেছে। তাদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে মোদি সরকারের উদ্যোগের অংশই হল জাতীয় জনপঞ্জি বা এনআরসি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অঙ্গরাজ্য অসমে কেবলমাত্র এনআরসি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশজুড়ে একই রকম নাগরিকত্ব যাচাই কর্মসূচি চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে ধর্মের ভিত্তিতে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের আমাদের দেশে নাগরিকত্ব পেতে এই আইন এখন সাহায্য করবে।”

ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস এই ঘোষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেছে, “নির্বাচনের ঠিক আগে এই নকশা থেকে প্রমাণিত, তারা নির্বাচনে মেরুকরণ ঘটাতে চায়।”

মানবাধিকার সংক্রান্ত নজরদারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে এই আইনকে “বৈষম্যমূলক” বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, এই আইন “সাম্যের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।” তারা বলেছে, এই আইন “ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যকে বৈধতা দিচ্ছে” এবং “কাঠামো ও অভিপ্রায়ের দিক থেকে এটি বহিষ্কারমূলক।”

ভারতে বর্তমানে ২০০ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করে। সে দেশের ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যায় তারা একটা বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ভারতের প্রায় সব প্রান্তে তারা ছড়িয়ে রয়েছে এবং ২০১৪ সালে মোদি প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কয়েক দফা আক্রমণে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ট্যাগ্সসমূহ: ভারত ، মুসলিম ، মোদি ، আইন ، বিরোধী
captcha