IQNA

মানুষ অস্তিত্বহীনতার চেয়ে কষ্টের জীবন পছন্দ করে

16:24 - May 07, 2022
সংবাদ: 3471820
তেহরান (ইকনা): বেহেস্তে প্রবেশ করা এমন একটি পুরস্কার যা পৃথিবীতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটি একটি প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি যা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার জন্য ঐশী ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সামনে রাখা হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া কি আর কোন উপায় নেই?
"ব্যবহারিক ধর্মতত্ত্ব" সম্মেলনের প্রাক-সম্মেলনে "ইসলামী ধর্মতত্ত্ব" এর বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিম রেজা বেরেঞ্জকার ব্যবহারিক ধর্মতত্ত্ব এবং দুঃখকষ্টের ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই সম্মেলনে তার আলোচনা নীচে তুলে ধরা হল:
 
ব্যবহারিক ধর্মতত্ত্বের লক্ষ্য একজন ব্যক্তি যে দুঃখকষ্ট অনুভব করে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাকে এই দুঃখকষ্ট পরিচালনা করতে সাহায্য করা। এই পদ্ধতিটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো, যা রোগীর ব্যথা চিহ্নিত করে এবং উপযুক্ত ওষুধ লিখে দেয় এবং ওষুধটি ব্যবহারিক ধর্মতত্ত্ব হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
 
পার্থিব ভালো-মন্দ তাদের বিরোধী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে
 
পার্থিব ভাল এবং মন্দ একে অপরের বিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: 
 
عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ»
 
তোমাদের ওপর যুদ্ধ (জিহাদ) ফরয করা হয়েছে, যদিও তোমাদের তা পছন্দ নয়; (এতে কোন বিস্ময় নেই যে,) হয়ত তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ কর, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং (এতেও কোন বিস্ময় নেই যে,) হয়ত তোমরা কোন কিছুকে পছন্দ কর, অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর এবং আল্লাহ (সব কিছুই) জ্ঞাত, আর তোমরা অনবহিত।
সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬
 
ঐশ্বরিক শাস্তির দর্শন
 
ঐশ্বরিক শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে জাগ্রত করা এবং তাকে আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে দেওয়া। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: 
 
«ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ»
 
মানুষের কৃতকর্মের ফলে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় প্রকাশিত হয়েছে; যাতে তিনি (আল্লাহ) তাদের কিছু কর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, হয়ত তারা (তাঁর পথে) ফিরে আসবে।
সূরা রূম, আয়াত: ৪১
 
কিছু কিছু ক্ষেত্র মানুষের খারাপ কৃতকর্মের ফলে তাকে ইহকালে শাস্তি প্রদান করা হয় এবং এই শাস্তি প্রদানের মূল লক্ষ্য হল মানুষকে মহান আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে নেওয়। অবশ্য, খারাপ কৃতকর্মের শাস্তি প্রদান ছাড়াও মানুষকে এমন কিছু শাস্তি প্রদান করা হয় যার জন্য প্রজ্ঞা রয়েছে। যেমন: শাস্তির বিনিময় মানুষকে জ্ঞান প্রদান করা, মহান আল্লাহর অধিক সান্নিধ্য লাভ করা অথবা মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি প্রমুখ।
 
সেই ব্যক্তির উত্তর, যে দুনিয়ার কষ্টও চায় না, পরকালে বেহেশতও চায় না
 
কেউ বলতে পারে আমরা দুনিয়ায় কষ্ট চাই না এবং বেহেশত’ও চাই না। প্রথমত, বেহেস্তে যাওয়া সহজ। কিন্তু যদি বেহেস্ত না থেকে থাকে তাহলে আমরা আমাদের পরিপূরক “জীবন”কে সুখ ও কষ্টের সাথে “না থাকা”কে প্রাধান্য দেবো। সমস্ত মানুষ, এমনকি নাস্তিকরাও বেদনা ও কষ্টের মধ্যে বাস করে এবং নাস্তিকদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন আত্মহত্যা করে।
 
আমরা অস্তিত্বের মহাকাশে নিক্ষিপ্ত, আমাদের সামনে দুটি পথ রয়েছে; একটি হল আনন্দ বাড়ানো এবং কষ্ট কমানোর চেষ্টা করা এবং অন্যটি হল কষ্টের সময় প্রতিবাদ করা এবং হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া। এক্ষেত্রে আমাদের মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসর আনতে হবে এবং অন্য জগতে একটি উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতিতে যুক্ত হতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha